পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনা মানসিক হাসপাতালের বেদখল হওয়া ১০০ বিঘা জমি উদ্ধারে দায়িত্বশীলদের উদাসিনতার কারণে বিশেষায়িত হাসপাতালটি বিশ্বমানের মানসিক হাসপাতাল হিসেবে উন্নিতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়নের কোন অগ্রগতি নাই। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে দ্রুত জমি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন পাবনার সচেতন মহল।
জানা যায়, মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য ১৯৫৭ সালে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুরে ১৩৩.২৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনার মানসিক হাসপাতাল। পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা থাকায় জমি অধিগ্রহণের কোনো ঝামেলা না থাকায় দীর্ঘ দিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত পাবনা মানসিক হাসপাতালকে বিশ্বমানের হাসপাতাল করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে যাবতীয় দিকনির্দেশনা দ্রুত প্রেরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
২০২০ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন করে কিছু নির্দেশনা দিয়ে যান। নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হলো পাবনা মানসিক হাসপাতালের বেদখল হওয়া ১০০ বিঘা জমি উদ্ধার করা। ৬ মাসেও জমি উদ্ধারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি হয় নাই। দায়িত্বশীলদের উদাসিনতার কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালের একটি সুত্র জানান, পাবনা মানসিক হাসপাতালের মোট জমির পরিমান ১৩৩. ২৫ একর। আগে এই জমির খাজনা দেয়া হত। এর মধ্যে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দেযা হয়েছে ৩০ একর। বর্তমানে পাবনা মানসিক হাসপাতাল খাজনা দিচ্ছে ৭৪ একর জমির। রহস্যজনকভাবে অবশিষ্ট ২৯.২৫ একর জমি বেহাত হয়ে গেছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন করে এ তথ্য জানতে পারে। বেহাত বা বেদখল হওয়া ২৯.২৫ একর (১০০ বিঘা) জমি দ্রুত উদ্ধার করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশ দেন।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইক্রিয়াট্রিক মো. মকবুল হোসেন (পাশা) জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় মানসিক হাসপাতালের ২৯ একর জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা দ্রুত সমাধান করার জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগীতা চাইলে বিষয়টি জানা জানি হয়। তিনি প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আধুনিকমানের হাসপাতালটিতে মানসিক রোগী এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সংশি¬ষ্ট সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এখানে আধুনিক মানের ওয়ার্ড, রোগী পুনর্বাসন সেন্টার, বৃত্তিমূলক সেন্টার, মিউজিক্যাল থেরাপি, চিত্রাঙ্কন সেন্টার, হাফওয়ে হাউজ, চাইল্ড সাইকিয়াট্রি, অটিজম সেন্টার, সার্বক্ষণিক জরুরি বিভাগ, অ্যামুজমেন্ট সেন্টার, গার্ডেনিং, সুইমিং, ক্যাটল ফার্মি, সাইকিয়াট্রিক ট্রেনিং সেন্টার, আধুনিক প্যাথলজি বিভাগ, অর্গানোগ্রাম, লন্ড্রি প্লান্ট, আধুনিক স্টোর ভবন, আধুনিক প্রশাসনিক ভবন, বহির্বিভাগ, যানবাহন সুযোগ-সুবিধা, আধুনিক ডরমিটরি, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সেন্টার, সাইকিয়াট্রি বিশেষজ্ঞ সৃষ্টির জন্য এমফিল, এসসিপিএস, এমডি ইত্যাদি কোর্স চালু, প্লে¬ গ্রাউন্ড, ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকবে।
এ ব্যাপারে পাবনা মানসিক হাসপাতারের পরিচালক ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, জমির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে সমন্বিত প্রচেষ্ঠায় জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা হবে।
পাবনা গণপুর্ত বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার জানান, আমরা সাধারণত অবকাঠামো সংক্রান্ত কাজ করি। পাবনা মানসিক হাসপাতাল বিশ্বমানের হবে সেটা আমরা শুনেছি। তবে জমি নিয়ে সমস্যা আছে সেটা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।
পাবনা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোকসানা মিতা জানান, মানসিক হাসপাতালের জমি বিভিন্ন নামে রের্কড হয়েছে। রেকর্ড পরিবর্তন করতে হবে। আমরা কাজ শুরু করেছি।
পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল মতীন খান বলেন, আমার জানামতে পাবনা মানসিক হাসপাতাল বিশ্বমানের করার চিন্তা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী করছেন। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি কয়েক মাস আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিম এখানে এসে পরিদর্শন করে যে পরামর্শ দিয়েছেন সেটা বাস্তবায়নে মানসিক হাসপাতালের পরিচালকের আগ্রহ কম। জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে মানসিক হাসপাতালের পরিচালক জেলা প্রশাসন, গণপুর্ত বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ কারোর সাথে সমন্বয় করেন নাই। জমি কম হওয়ায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধের অভাবে বিশাল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে পাবনাবাসি শংকিত।
পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালে ২৯.২৫ একর জমি উদ্ধারের জন্য সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমন্বয়য়ে কমিটি করা হয়েছে। জমি অন্যান্য মানুষের নামে রেকর্ড হয়ে আছে সেটা আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জমি উদ্ধারে সকল প্রকার সহযোগতিা করতে জেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে।
এব্যাপারে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা মানসিক হাসপাতার বিশ্বমানের করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতিমধেই পাবনা মানসিক হাসপাতাল বিশ্বমানের করার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে কারো গাফিতলি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল পাবনাবাসীর জন্য অহংকার। এ হাসপাতাল শুধু পাবনা বা বাংলাদেশের মানুষই নয় সারা বিশ্বের মানুষের কল্যানে আসবে। সারা বিশ্বে পাবনা পরিচিতি পাবে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল বিশ্বমানের করতে যতপ্রকার সহযোগীতা প্রয়োজন আমি করতে প্রস্তুত আছি। পাবনার মানুষ পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আর্ন্তজাতিক মানের হাসপাতাল করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি পাবনাবাসী চির কৃতজ্ঞ।
Discussion about this post